প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
তালিম তরবিয়তের অতুলনীয় প্রতিষ্ঠান "জামেয়া দারুল কায়েদ তাহীলী নেছারাবাদ "। ফলাফলে সেরা এ বিশাল প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের ছাত্রের জন্য রয়েছে শিক্ষার সু-ব্যবস্থা। হাফেজ,বয়স্ক , শিশু, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ক্যাম্পাস।
ওলীয়ে বরহক, ইনসানে কামেল, বিশিষ্ট দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক, মুজাদ্দিদ, হাদীয়ে যামান হযরত মাওলানা মুহম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.) ১৯৫০ইং সনে প্রতিষ্ঠা করেন এ কমপ্লেক্সটি ফোরকানিয়া মাদরাসা হিসেবে।পরবর্তীতে এখানে নূরানী হিফজ,বালিকা মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা সহ ৪২ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ।
২০০৫ইং সনে জনাব মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের হাফেজ তালিবুল ইলমদেরকে জাতির রাহবার, পথ প্রদর্শক ও করণধার হিসেবে গড়ে তোলার গবেষণা থেকে এ প্রতিষ্ঠানটির শুরু। ২০২১ ইং সনে এটাকে দরসে নেজামী অনুযায়ী দাওরা হাদিস জামাত পর্যন্ত উন্নীত করেন । পরবর্তীতে ৫বছরে দাওরা হাদিস পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা, মাদানী নেসাব, দুই বছর মেয়াদী ইফতা বিভাগ চালু করা হয়েছে। তাফসির ও আদব বিভাগ চালু করাসহ একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়াস চলছে ।
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে পরিচালনা, ত্যাগী, মুত্তাকী, মুখলেছ, সৎ ও যোগ্য শিক্ষকমন্ডলীর শিক্ষাদান, সুন্দর, স্বচ্ছ ও প্রত্যাশিত মনোগ্রাহী পরিবেশ এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ মাদরাসা টিকে আজ দেশময় পরিচিত শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আমলি জিন্দেগি গঠন ও তাবলীগে দ্বীন দ্বারা দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রেজামন্দি হাসিল করার উদ্দেশ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষা প্রদান এর মাধ্যমে ছাত্রকে বুদ্ধি জাত আধ্যাত্মিক সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে জাতিকে ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান শিক্ষিত সুশৃংখল দক্ষ সৎ ও নিষ্ঠাবান জাতির রাহবার পথপ্রদর্শক ও কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলা।
মাদরাসার বিশেষত্ব
- এ প্রতিষ্ঠান আল ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ তথা মতানৈক্যসহ ঐক্য নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত বিধায় কলেমায় বিশ্বাসি সকল ধরণের ছাত্র ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়।
- এ মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা, কর্মচারিগণ হানাফি মাযহাব, সুন্নিয়া তরিকা ও ছেলছেলা মেনে চলেন।
- শিক্ষার্থীদের ইসলামী জীবন গঠনে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
- দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ।
- সুন্নত তরীকার পূর্ণ অনুসারী প্রতিষ্ঠান।
- ক্যাডেট, কিন্ডারগার্টেন, ফোরকানিয়া ও নূরাণীর সমন্বিত পদ্ধতিতে পাঠদান।
- সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ।
- বছরের শুরুতেই পাঠ্যবিষয়ে দুর্বল ছাত্রদেরকে চিহ্নিত করে বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে গড়ে তোলার ব্যবস্থা।
- সাপ্তাহিক জলছা, সাধারণ জ্ঞান, বিতর্ক ও রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশ সাধন।
- শ্রেণিভিত্তিক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা
- প্রতিবছর অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন।
- আরবি ও ইংরেজি ভাষা কোর্সের আয়োজন।
- প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ।
- হাফেয ছাত্রদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে তাহীলী মাদরাসা।
- স্কুল থেকে আগত ছাত্রদের জন্য স্কুল বিভাগের ব্যবস্থা রয়েছে।
- কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাত্রদেরকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা।
মসলক বা আদর্শ
দশ দফা মূলনীতি ও পঞ্চ রাহনোমা উসূলের ভিত্তিতে অত্র জামেয়া পরিচালিত হবে।
(ক) দশ মূলনীতি :
- ১. লিল্লাহিয়াতঃ পার্থিব ও পারলৌকিক যাবতীয় কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা।
- ২. ইতায়াত ও ইত্তেবায়ে সুন্নাহ: জীবনের সকল ব্যাপারে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের এর অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
- ৩. একামতে দ্বীন : সমগ্র জীবন তথা জীবনের প্রত্যেকটি বিভাগ ও উপবিভাগকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী গড়ে তোলা।
- ৪. তাবলীগে দ্বীন : ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী গড়ে তোলার নিমিত্ত ইসলামের বিধানসমূহ প্রচার করা।
- ৫. আমরু বিল মা'রুফ, নাহি আনিল মুনকার: ন্যায় কাজের আদেশ করা এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ, সুযোগ না থাকলে প্রতিবাদ, নিরুপায় হলে সংস্কার-সংশোধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
- ৬. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ: ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা; শারীরিক, মানুষিক সর্ব প্রকার কষ্ট স্বীকার করা এবং জান-মাল তথা সর্বশক্তি নিয়োগ করা।
- ৭. ই'তিছাম বি হাবলিল্লাহ: দ্বীনকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ ও সু-শৃংখলবদ্ধ হওয়া।
- ৮. এতায়াতে উলিল আমরঃ শরীয়তের খেলাফ না হওয়া পর্যন্ত যিনি নেতৃত্তে থাকেন তাকে মেনে চলা।
- ৯. ইল্ল্স ও ছোহবত: ইলমেদ্বীন হাসিল করা এবং তদানুযায়ী আমলী জিন্দেগী গঠন করার জন্য ছোহবতে ছালেহীন গ্রহণ করা।
- ১০. যিকির ও ফিকিরঃ আল্লাহ তায়ালার মুহব্বত হাসিলের জন্য যিকির করা এবং লক্ষ্যে পৌছার সঠিক পথ নির্নয়ের নিমিত্ত চিন্তা-ফেকের করা।
-
(খ) পঞ্চ রাহনোমা উসূল -
- ১. আকায়েদের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারী হতে হবে।
- ২. ফেকাহর ব্যাপারে মাযহাব চতুষ্টয়ের কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করাকে ওয়াজিব মনে করতে হবে। তবে কোন হক্কানী ও মোহাক্কেক আলেম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের উপর কায়েম থেকে যদি ফেক্সি মাসায়েল কিতাব ও সুন্নাহ হতে ইস্তিম্বাদ করেন তবে তাদের প্রতিও তনতাছনী করা উচিৎ হবেনা। উদাহরণ স্বরূপ হযরত মোজাদ্দেদে আলফেছানী রহ. ও শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
- ৩. সকল ব্যাপারে ইফরাত ও তাফরীত (উগ্রতা ও শিথীলতা) বর্জন করে রাহে এ'তেদাল বা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে।
- ৪. দুনিয়া বর্জনীয় নহে। তাই দুনিয়াকে আখেরাতের পরিপুরক হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং উহাও ইবাদতের মধ্যে শামিল হবে বলে বিশ্বাস রাখতে হবে।
- ৫. দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। তাবলীগী পদ্ধতিতে ইছলাহে হুকুমতের খেদমত করতে হবে।